Monday 13 July 2015

১৪ ফেব্রুয়ারির জন্মদিন।

আজ ২০শে ফেব্রুয়ারি । আমার মনটা অনেকটাই খারাপ আজ ।
আমার রুমমেট সুমন। খুব ভালো ছেলে ।খুব ইমোশনাল। সুমন ইবি তে C.S.E. তে পড়ে থার্ড ইয়ারে।আমরা গোরস্থানে পিাড়াতে থাকি। এখন রাত্রি ১টা বাজে। লিখতে বসলাম। সুমন শুয়ে আছে। সে সন্ধ্যা থেকে অনেক কেঁদেছে। সকাল থেকে খাওয়া দাওয়া করে নাই। অনেক বলার পরেও খাওয়া দাওয়া করাতে পারিনাই।
আর..........। ও...হ্যাঁ...। আমি রাসেল। আমি ইবি তে ম্যাথ এ মাস্টার্স এ পড়ছি।
আমি সুমনের সাথে মাত্র এক মাস আছি। আমার মেসে থাকি ২০০৮ সাল থেকে। আমার মেস লাইফে সুমনের মত ছেলে পাই নাই। নম্র ভদ্র একটা ছেলে।
কিন্তু রহস্যময় একটা ছেলে। মাঝে মাঝে মনে হয় অনেক কষ্টে আছে। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় সব থেকে খুশি একটা ছেলে।
সুমন পরি নামের একজন মেয়েকে ভালোবাসতো। কিন্তু মেয়েটি সুমনকে পাত্তা দিতো না। তবে পরী বুঝতো সুমন তাকে কতটা ভালোবাসে। স্কুলে পরী আর সুমন একই সাথে পড়তো। এখন সুমন এখন ই.বি. তে পড়ে আর পরী সরকারী কলেওজে পড়ে।
সুমন একটা কোচিং সেন্টারে একটা পার্টটাইম জব করকো। গত ফেব্রুয়ারিতে সে তার প্রথম বেতন পেয়েছে।জীবনের প্রথম উপার্জনে সে তো মহা খুশি।
আমাকে বল্লো
-রাসেল ভাই......
-হ্যা...বলো।
-কি করা যায় বলেন তো.....?
-কিসে কি করা যায??
-প্রথম বেতন পেলাম। মেসে তো মিষ্টি খাওয়ালাম।আর............
-আর..........। আর কি?
-যদি গার্লফ্রেন্ড থাকতো.....................
-রাইট...। তোমার পরী আছে না।....। ওকে একটা গিফট দাও........।
-ধ্যাৎ কি যে বলেন না ভাই......?? ও তো আমার সাথে কথাই বলতে চায় না আর গিপট নেবে??
-নেবে নেবে । দিয়েআ দেখো না..........।মেয়েরা গিফট পেলে খুশি হয়............।
-ও ঐ রকম না । আর কি ভাবে দেবো??
-তুমি ওর সাথে দেখা করো।
-দেখা করতে চাবে না।
-করবে করবে । দেখা করবে অবশ্যই ।আর আগে থেকে কেছু বইলো না। দেখা করতে গিয়ে দিয়ে দেবে।
-ওকে। পরীকে একটা গিফট দেবো। আর কিছু টাকা মাকে দেবো। কেমন হবে??
-খুব ভালো হবে। দারুন হবে দারুন।
এই সমস্ত ছোট খাটো ব্যাপারে সুমন আমার সাথে আলোচনা করতো। মেয়েটিকে সুমন ফোন করলে সে ফোন রিসিভ করতো না। ফেসবুকে নাকি মাঝে মাঝে চ্যাট করতো।
১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে যখন রুমে আসলাম তখন সুমনকে খুব হাসি খুশি দেখলাম। তো ওকে খুশি দেখে ভালোই লাগলো।ওকে জিজ্ঞেস করেই ফেল্লাম
-কি সুমন সাহেব। এত খুশি খুশি লাগছে যে?
-জ্বী ভাই একটু একটু।
-কাহিনীটা কি??
-পরী দেখা করতে চেয়েছে।
-কবে>??
-সেটা বলে নাই।
-তবে???
-ও বলেছে ১৫ থেকে ২০ তারিখের ভেতরে দেখা করতে চেয়েছে।
-এটা আবার কেমন? তুমি বল্লে না যে ১৪ তারিখে দেখা করতে হবে।
- কি যে বলেন না?? এমনিতেই দেখা করতে চায় না আবার ১৪ তারিখে??
-তাও.... তো বলতে পারতে.....।। যাই হোক কি বল্লো?? যখন দেখা করতে চাইলে তুমি??
-ও বল্লো ১৫ থেকে ২০ তারিখের ভেতরে আমি বাসায যাবো । আর যেদিন বাসায় যাবো সেদিন তোমার সাথে দেখা করবো।আচ্ছা ওকে কি দেয়া যায় বলুন তো?
-একটা সুন্দর ডায়েরি আর একটা কলম দিয়ে দাও। আর বেশি কিছু দেয়ার দরকার নাই।
-আচ্ছা আগামী কাল বিকেলে আমি আর আপনি গিয়ে কিনে আনবো।
-ওকে।
১৩ তারিকে আমি আর সুমন ইসলামিয়া কলেজ মার্কেট থেকে সুন্দর একটা ডায়েরি আর একটা কিনে আনলাম পরীর জন্য।সুমনের বাসা থেকে ওর বাবা প্রতিদিন বাড়ি যেতে বলে কিন্তু ও শেুধু আসবো আসবো করে।শুধু পরীর সাথে দেখা করার জন্য যায় না।প্রতিদিন ওকে জিজ্ঞেস করতাম কবে সে দেখা করবে??
১৪ তারিখ চলে গেলো।
সুমন ফোন দিলে রিসিভ করে না পরী।ফেসবুকে মেসেজ এর উত্তরও দেয় না। তবুও সুমন পরীর জন্য অপেক্ষা করে।যে একবার না একবার পরী তার সাথে দেখা করতে চাইবে।তাকে বলবে “সুমন, কালকে আমি বাসায় যাবো। আর কাল তোমার সাথে দেখা করবো।”
কিন্তু এক এক করে ১৫ তারিখ যায়। ১৬ তারিখ যায়।১৭,১৮,১৯তারিখ চলে গেলো। আজও সারাদিন সুমন পরীর মেসেজ এর জন্য অপেক্ষা করতো।এ কয়টা দিন ছেলেটাকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছিলো।সেই ছেলেটিকে এখন নির্জীব দেখাচ্ছে। ওর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।হয়তো এখনো ঘুমায়নি।অন্য দিন হলে আমার সাথে কথা বলতো। আমি কি করছি জিজ্ঞেস করতো।
সন্ধ্যায় রুমে এসে দেখি ও রুমে নেই।ফোন বন্ধ।ওর পছন্দের জায়গা ছিলো আমাদের মেসের ছাদ।মন খারাপ থাকলে একা একাই ছাদে গিয়ে বসে থাকতো।আমাদের মেসের ছাদের উপর থেকে পরীদের মেস দেখা যেত হালকাস হালকা। ঐ দিকে তাকিয়ে থাকতো সুমন।ভাবলাম ছাদে আছে সুমন। ছাদে গিয়ে দেখি ছাদের এক কোণে আগুন জ্বলছে। আর বসে বসে কাঁদছে। বুঝলাম আগুনের সাথে তার দুঃখ গুলোকে ছাইয়ে পরিনত করছে। কাগজ গুলো ভালোই পুড়ছে আগুনে।
দূর থেকেই চলে এলাম।
কাঁদুক ছেলেটা।
এতে কিছুটা হলেও হাল্কা হবে।
তাই তাকে আর থামালাম না বা স্বান্তনা দেয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করলাম না।
এখন শুয়ে আছে সুমন ............।
আর আমি লিখছি।........
বুঝি যে মেয়েটা আসবে না ওর জীবনে। তবুও ওকে বলি একদিন ও তোমাকে বুঝবে। একদিন ও আসবেই....................।
সস্তা এই গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এটা বেশিরভাগই........ বাস্তব..........আর কিছুটা কাল্পনিক।
ধন্যবাদ।

No comments:

Post a Comment