Monday 13 July 2015

অনেক দিন পর আবার একটা গল্প লিখলাম। অনেকেই ইনবক্সে পাঠাচ্ছেন কেন আর লেখালেখি করছি না? তাদেরকে বলছি আসলে একটু ব্যাস্ত আছি তো তাই।

-----------------------------------------------------------------------------------------
রাত্রি ১১টা।
সেই সন্ধ্যা থেকে বসে আছি একটি মাত্র প্রোগ্রাম নিয়ে। ডেসিমেল সংখ্যা থেকে বাইনারী সংখ্যা কনভার্ট করার একটি প্রোগ্রাম তৈরী করতে হবে। কিন্তু লজিক টা কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। মাথাটা একেবারেই অকেজো হয়ে আছে। রাত্রি ৮টার দিক থেকে ট্রাই করছি। এরর আর এরর । আমি ক্লান্ত। আমার মস্তিষ্ক ক্লান্ত।
ক্লান্ত হবেই বা না কেন? আমার মস্তিষ্কটা তো আর মেশিন নয়।
সেই সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেছি।৮টায় কোচিং এ ক্লাস নিতে হবে। কাল ফারুক স্যার ফোন দিয়েছিলেন। এদের কোচিং এর নিয়মটা ভালোই। যে দিন যে দিন ক্লাস থাকে তার আগের দিন ফোন দিয়ে বলে দেয়। না হলে আমার মতো যত বিজি শিক্ষক থাকতো তারা কেউ ঠিকঠাক ক্লাস নিতে পারতো না।
ওহ্ অমি তো আমার পরিচয় ই দেই নাই। আমি কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়ি। অবশ্য প্রোগ্রামিং এ কথা শুনে বুঝে ফেলেছেন ।আমার মনে হয় এর বেশি আর পরিচয় দেয়ার দরকার হবে না।
সকালে ক্লাস নিয়েছি। আজকের পড়ানোর বিষয় ছিলো নেটওয়ার্ক টপোলজি। ৪০মিনিট শুধু লেকচার দিয়েছি। এর ভেতর আবার ছেলে মেয়েদের বদমায়েশি। আর জিলা স্কুলের ছেলেরা আর গার্লস স্কুলের মেয়েরা যে এত দুষ্টু হয় জানা ছিলো না।ক্লাস শেষ করে আবার ক্যাম্পাসে যেতে হবে। না হলে প্রোগ্রামিং এর প্রফেসরের কাছে ঝাড়ি শুনতে হবে। আর বোরিং লাগে তার ক্লাস করতে । পৃথিবীতে ঐ প্রফেসরের ক্লাস করার মতো বিরক্তিকর জিনিস আর নাই। একটা সমস্যা দিয়েছেন আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট্। ডেসিমেল সংখ্যা থেকে বাইনারী সংখ্যা কনভার্ট করার একটি প্রোগ্রাম তৈরী করতে হবে। ক্লাস শেষ করে আরও অন্যান্য ক্লাস গুলো করলাম। তারপর রুমে আসলাম ২টার দিকে।তারপর আবার দুপুরের খাবার খেয়ে ওয়েব ডিজাইনের ক্লাসে ছুটলাম । গত দিনের কাজ ঠিকঠাক প্যাক্টিস করিনাই দেখে মাহফুজ ভাইয়াও ঝাড়ি দিলেন। মাহফুজ ভাইয়া হলেন আমাদের ওয়েব ডিজাইনের শিক্ষক।
কিছুই করার নেই। ইদানিং বড়ই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি।সব সময় শরীরে ক্লান্তি লেগেই থাকে। ৪.৩০ এ ওয়েব ডিজাইনের ক্লাস শেষ করে ছুটলাম কোচিংয়ের দিকে ৫.০০টায় আবার ক্লাস আছে।
কোচিংয়ের ছেলেমেয়ে গুলো সবাই শহুরে।আমাদের কিছু মনেই করে না। বিশেষ করে যে শিক্ষক গুলোর বাসা গ্রামে।তাই কথা একটু বেশিই বলা লাগে।আবারও ৪০ মিনিট শুধু বক বক করেছি। মাথা এখন একেবারেই শেষ। কোচিং থেকে বের হলাম ৬:১৬ মিনিটে। রুমে পেীছলাম। মাথার ভেতর ঝিম ঝিম করা শুরু হয়ে গেছে। গোসল দিলাম।
এখন আর মন চাইছে না যে দু মিনিট আর বসে থাকি। ঘুম ঘুম ঘুম। কিন্তু ঘুমালে চলবে না। প্রোগ্রামটি তৈরী করতেই হবে। বসে পড়লাম। একটু আগে উঠলাম মাথায় আর কোন কাজ করছে না। মনের ভেতর বলছে আজ যদি ঐব্যটারে পাইতাম…….। যে প্রোগ্রামিং সি তৈরী করেছেন। ঐ ব্যাটাকে শিখিয়ে দিতাম প্রোগ্রামিংয়ের ভাষা কি জিনিস। কিন্তু মারা গিয়ে বেঁচে গেছেন । আমরা পড়েছি মহা বিপদে।
আমার রুমমেট মিজান ভাই। উনি একটু ধুমপায়ী। একটা ব্যাংকে জব করেন।বয়স ২৮ এর বেশি। এখনো বিয়েই করেন নি।উনাকে বল্লাম
-মিজান ভাই চলেন বাইরে যায়…………..চা খেয়ে আসি।আর আপনার টাও হয়ে যাবে।
-চলো যাই। কি ব্যাপার এমন লাগছে কেনো তোমাকে?
-আর বইলেন না। কি এক প্রোগ্রাম দিয়েছে । মেলাতেই পারছি না।
আমি আর মিজান ভাই বাইরে গেলাম। আমি চা খেলাম আর মিজান ভাই ঐ টা খেলো মানে সিগারেট।
তারপর রুমের দিকে হাটছি। অনেক দিন পায়রার সাথে কথা বলা হয় নাই। আজ একটু ফোন দেই । যেই ভাবা সেই কাজ।প্রায় ৩০ দিন পর আজ পায়রার সাথে কথা বলছি। অনেক্ষণ কথা হলো আজ। প্রায় ৪৫ মিনিট। শেষে যখন ও জিঞ্জেস করলো কি খেয়েছি আজ? তখনই মনে পড়লো যে আজ রাত্রে এখনো আমি খাইনাই।
আর পায়রা যখন ফোন রাখতে চাইলো তখন মনে হলো এইতো ৫মিনিট কথা হলো এখনই রাখবে?? জোর করলাম না।ফোনটা রেখে দিলাম। রেখে দিয়ে দেখি ৪৫ মিনিট কথা হয়ে গেছে।
রুমে গিয়ে ভাত খেলাম। তারপর ডেনিস রিচির গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে ঘুমমিয়ে পড়লাম। ডেনিস রিচি হলেন সি প্রোগ্রামিংয়ের জনক। ২০১১ সালে মারা গেছেন।
মোটামুটি মাঝ রাতের দিকে সিগারেটের ধোয়তে ঘুম ভাংলো।ভাবলমাম মিজান ভাই কি রুমের ভেতরেই………..। কিন্তু উনি তো কখনোই এমন কাজ করবেন না। বারান্দায় গিয়েও যদি উনি সিগারেট খান তবুও আমাকে জিঞ্জেস করে খান।আর মিজান ভাইয়ের মুখে দাঁড়িও নাই।ঘরের লাইট বন্ধ।আমার ল্যাপটপ অন করা। সেটর মৃদু আলোতে তার মুখ দেখা যাচ্ছে। লাল টকটকে চেহারা। হাসি হাসি মুখ। কোকড়ানো কোকড়ানো সাদা সাদা দাড়িতে মুখ ভর্তি। উনাকে দেখে হাল্কা হাল্কা বুঝলাম উনি হয়তো বা প্রোগ্রামিং সি এর জনক ডেনিস রিচি ।উনার ছবি ইন্টারনেটে দেখেছি। হাতে দামি ব্যান্ডের সিগারেট। পাশেই প্যাকেট পড়ে আছে । যা দেখে বুঝলাম। আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছেন।আমার নাম ধরে ডাকলেন
-তোমার সমস্যা আমি সমাধান করে দিয়েছি।
-আপনি কে ?? আর আপনি রুমে ঢুকলেন কিভাবে?? রুমে তো ভেতর থেকে লক করা ছিলো। আর রুমের ভেতর স্মোকিং করছেন কেন?
-আমি ডেনিস রিচি। প্রোগ্রামিং এর জনক।
-আমার সাথে ইয়ার্কি মারছেন? আর স্যার রিচি তো ২০১১ সালেই মারা গেছেন। মতলব কি বলেন?আর আপনি কে? ঘরে ঢুকলেন কিভাবে বলুন না হলে লোক জন ডাকবো। আমাদের এখানে কিন্ত এক ভাই থাকেন যিনি রাজনৈতিক নেতা।
-আমি জানি। আর আমি এটাও জানি আমি মারা গেছি। তুমি যে প্রোগ্রামটির সমাধান করতে পারো নাই । এবং যার জন্য আমাকে অনেক বকাবকি করেছো তাই সমাধান করার জন্য এসছি।
-একদম মিথ্যা বলবেন না। স্যার রিচি কি কখনো বাংলা জানতেন?? আমাকে বোকা পাইছেন??
-মরার পরে আমরা সব ভাষা বলতে পারি সব ভাষা বুঝতে পারি।
আমি উনার সাথে কথা বলতে বলতে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালালাম। লাইট জ্বালিয়েই পেছন ফিরে দেখি স্যার ডেনিস রিচি নেই। উধাও। আমার পিসি ও বন্ধ। আমার স্পস্ট মনে আছে আমি ঘুমানোর সময় আমার পিসি বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলাম। আর আমার পিসি তে পাসওয়ার্ড দেয়া থাকতো যেটা কেউ জানতো না। মাঝে মাঝে আমিও ভুলে যেতাম। তাই ডায়েরিতে লিখে রাখতাম। আর আমি আমার ল্যাপটপ বন্ধ রাখলে LED অর্থাৎ শাটার নামিয়ে রাখতাম। কিন্তু LED এর আলোতে আমি স্যার রিচি কে স্পস্ট দেখেছি। ঐ দিকে মিজান ভাই নাক ডেকে দিব্যি ঘুমোচ্ছেন। আস্তে কোনো শব্দ হলে বা কথা বললে যিনি জেগে উঠেন। তার পাশে এত কিছু ঘটে চলেছে তিনি কিছুই টের পাচ্ছেন না। তখন বুঝলাম হ্যালোসিনেশন এর জন্যই এমনটা হয়েছে। আর হয় তো বা যদি আমি বিজ্ঞানের ছাত্র না হতাম তবে কিন্ত অন্য রকম ব্যাপার হয়ে যেত।হয় তো বা তাকে বকাবকি করেছি যেটা মস্তিষ্ক ধরে রেখেছে । এসমস্ত কারনেই হয়তো হবে।
লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। মিজান ভাই কে আর ডাকলাম না।
সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম। কারণ ঐ সমস্যাটার সমাধান আমাকে করতেই হবে। না হলে প্রফেসর ক্লাসটা করতে দেবেন না । হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে পিসি অন করলাম। আমার ল্যাপটপের স্ক্রিনে অর্থাৎ মনিটরের উপর কিছু থাকে না। মানে কোন ফাইল বা ফোল্ডার তাকে না। ডেস্কটপে শুধু My Computer; Recycle Bin; Run; Codeblock এই কয়েকটা আইকন ছাড়া আর কোন আইকন থাকে না। আজ দেখি একটা ফোল্ডার ডেস্কটপের উপর D2B(Decimal 2 Binary) Converter । ওপেন করে দেখি আমার ঐ প্রোগ্রামটা এখানে সঠিক লজিক । সঠিক সমাধান করা।
‪#‎include‬<stdio.h>
#include<conio.h>
void main()
{
int n,a[100],i=0,j;
printf("Enter the number to convert into Binary:");
scanf("%d",&n);
while(n!=0)
{
a[i]=n%2;
n=n/2;
i++;
};
for(j=i-1;j>=0;j--)
printf("%d",a[j]);
}
তাহলে কি কাল রাত্রে স্যার রিচি সত্যিই এসেছিলেন?? মাথায় ঢুকছে না। কি হয়েছিলো কাল রাত্রে।
পরে মিজান ভাইকে সব বল্লাম । উনি বল্লেন উনি কিছুই জানেন না।
আমার কাছেও এর কোন ব্যাখ্যা নাই।
গল্পটা কেমন লাগলো বলবেন। আর একটু খেয়াল করবেন এখানে যে কেন্দ্রীয় চরিত্র যিনি সব কিছু বলছে তার নাম কিন্তু বলি নাই । নাম সিলেক্ট করতে পারি নাই নাম তাই দেই নাই। অনেক গল্পই তো পড়েছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম দিয়ে । আমার টা না হয় নাই থাক। একটু আলাদাই থাক। আর হ্যাঁ কেমন লাগলো জানাবেন।

No comments:

Post a Comment