Monday 13 July 2015

অনেকদিন পরে আবার একটি গল্প লিখলাম।এবার একটু হরর টাইপের‌।কেমন হয়েছে বলবেন।

 

--------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি রাহুল।
আমি পড়াশোনা করি কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে।
গত সেশনে আই.সি.টি. তে ভর্তি হয়েছি।
আমার বাসা ভেড়ামারা। সঙ্গত কারনেই আমাকে মেসে থাকতে হয়। আমার মেস কুষ্টিয়া পৌরগোরস্থানের কাছে। আমার রুমমেট ছিলো দুই জন। মানে রুমে তিনজন থাকতাম। আমি ছাড়া বাকি দুজন হলো মাহফুজ আর হাসান। মাহফুজ এইচ.এস.সি. পরীক্ষার্থী। সে বেশিরভাগ সময়ই বাসায় থাকে। আর তার সাথে আমার আর হাসানের তেমন পড়ি-পড়তা হতো না। আর হাসান পড়তো ডিপ্লোমাতে।
হাসান আর আমার ভেতর খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। যদিও হাসানের কলেজ আমাদের মেস থেকে দুরে ছিলো । তবুও সে আমাদের সাথে থাকতো। এর প্রধান কারণ ছিলো আমাদের মেসের পরিচালক সবুজ ভাই ছিলেন হাসানের দূর সম্পর্কের চাচা।
যাই হোক................
হাসান একটি মেয়েকে ভালোবাসতো । তার নাম ছিলো হিমু। হিমুও হাসানকে অনেক ভালোবাসতো। আর হিমু পড়তো মেডিকেলে। অনেকবার হাসানের সাথে দেখাও করতে গেছি হিমুর সাথে। খুব ভালো মেয়ে হিমু। একদিন হিমু আমাকে ফোন দিয়ে কাঁদতে লাগলো। যে তার বাসা থেকে তার জন্য ছেলে দেখা হয়েছে আর তার সাথেই তার বিয়ে হবে। তো হাসানকে অনেক বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। হাসান খুব চিন্তিত ছিলো হিমুর বিয়ে ঠিক হওয়ার জন্য। হাসান একটি কোচিং এ ক্লাস নিতো। তাতে বাসায় বিয়ের কথাটা বলা খুবই কঠিন ছিলো। তবুও ওকে বল্লাম -“ আংকেলকে বুঝিয়ে হিমুদের বাসাতে পাঠাতে।”
ওর আর আমার একটা বদ অভ্যাস ছিলো রাত্রে বাইরে ঘুরে বেড়ানো। রাত্রি ১০টা বা সাড়ে ১০টা বাজলেই বেরিয়ে পড়তাম আমি আর হাসান। এজন্য হাসান আর আমাকে সবুজ ভাইয়ের কাছে আর হিমুর কাছে অনেক বকাও শুনতে হয়েছে।ঘুমন্ত শহরটাকে বড়ই ভালো লাগতো আমাদের।
তো হিমুর বিয়ের কথা শুনে হাসান বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে কি হতো সবই সে আমাকে বলতো । আর মেসের অন্যদের থেকে আমার আর হাসানের সম্পর্কটা ভালো ছিলো।
তখন গরমের সময় ছিলো। হাসান বাসায় যাওয়ার তিন চার দিন পর। আমার কাছে ফোন দিলো।আমি ফোন রিসিভ করে-
-হ্যালো।
-হ্যা.....।রাহুল।
-হ্যা... বলো হাসান। কি অবস্থা ??
-ওর বিয়ে হয়ে গেছে।
[বলেই কেদে ফেল্ল হাসান। হাসানকে অনেক কিছু বলে শ্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। ওর বাসা থেকে হিমুর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো কিন্তু তারা তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছে।]
-রাত্রে মিল দিও আমার.......... রাহুল।
-ওকে।
তার পর ফোন রেখে দিলাম। আমাদের মেসে ও সবথেকে হাসি খুশি আর চঞ্চল ছেলে ছিলো হাসান। সবাই তাকে খুবই ভালোবাসতো। ওর কষ্টে মেসের সবারই মন খারাপ।
ওদের বাসা থেকে আমাদের মেসে আসতে দুই ঘন্টা সময় লাগতো। কিন্তু এক ঘন্টা পরেই সেই হাসি খুশি মুখ নিয়ে ব্যাগ ঘাড়ে করে। ল্যাপটপ হাতে নিয়ে মেসে আসলে হাসান। কেউ দেখে বুঝবেই না ওর ভালোবাসার মানুষটির বিয়ে হয়ে গেছে অন্য কোথাও। আমি ভাবতেই পারলাম না ও এত দ্রুত কি করে আসলো।তারপর তাকে জিজ্ঞেস করেই ফেল্লাম-
-এত দ্রুত এলে যে???
-কেনো?? অ্যানি প্রোব্লেম??
-না.....। এত দ্রুত কি আসা সম্ভব বাসা থেকে ???
-সব কিছু দ্রুতই হয় রে পাগলা।
-আচ্চা আচ্চা তোমার এই দার্শনিকের মত কথা আমি বুঝবো না। তারপর.......
-হিমুর বিয়ে হয়ে গেছে.........।
-হুম জানি তো.........।
-কার সাথে হয়েছে জানো ???
আগ্রহ করে আর জানতে চাইলাম না। ও মনে কষ্ট পাবে বলে। তারপর ও নিজে থেকেই বল্লো-
-হিমুকে আমিই বিয়ে করেছি।আর ফোনে মিথ্যা বলেছি।
-রিয়েলি....................???
-ইয়াহ.....মাই ডিয়ার... ইয়াহ..........।
এবার ওর কথা শুনে আমাদের মাঝে যেন প্রাণ ফিরে এলো। সবাই প্রানোবন্ত হয়ে উঠলো। সবাই হাসানের কাছ থেকে মিষ্টি খেতে চাইলো। তো আমি আর হাসান মিষ্টি আনতে গেলাম কুষ্টিয়ার বড় বাজারের। বিখ্যাত অশোক মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে।
তবে বলে রাখি হাসান খুব ইয়ার্কি আর ফাজলামো করতো। তাই ভেবে আমরা বিকেলের তার ঐ ফোনের কথা আমলে নিলাম না।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমার ভালোই লাগছিলো যে ওরা দুজন এক হতে পেরেছে। কি পবিত্র প্রেমই না ছিল ওদের ভেতর।
বিকেল থেকে সন্ধ্যা পার হয়ে যাচ্ছে সবুজ ভাই মেসে নেই। হাসান অন্য দিন ওর কাকাকে না দেখলে তার খোঁজ খবর নিতো। যে তার কাকা কোথায়??? ফোন করতো । কিন্তু আজ তার কিছুই করছে না।
তো মিষ্টি নিয়ে আমি আর হাসান মেসে আসলাম সন্ধ্যার পর। সবাইকে মিষ্টি দিলাম। আমিও খেলাম। হাসান খেলো। তবে অন্য দিনের থেকে আজকের মিষ্টির স্বাদ আলাদা ছিলো। খুব খুব খুব খুব স্বাদ ছিলো মিষ্টি গুলো। আর আরেকটি জিনিস লক্ষ করলাম । হাসানকে আমার কাছে অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে কেমন জানি অন্য রকম অন্য রকম লাগছিলো।আমরা মিষ্টি খেলাম আর সবুজ ভাইয়ের জন্য রেখে দিলাম। ও খুব হাসি ঠাট্টা করতো তাই হাসতে হাসতে সবাইকে বল্লো-“আমার বিয়ে মিষ্টি তো তাই এতো টেস্ট। ” আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম। তারপর আমারা যে যে যার যার রুমে চলে গেলাম।
রাত্রি দশটা বেজে গেছে।
আমার আর হাসনের খাওয়া এখনো হয়নি। বাইরে থেকে ঘুরে এসে খাবো। প্রতিদিনকার রুটিন এটা আমাদের।
সবুজ ভাই এখনো মেসে আসেন নি। ওর অফিসে (মানে যে কোচিংয়ে হাসান ক্লাস নিতো সবুজ ভাই ও সেখানেই কাজ করতো।) অনেক কাজ ছিলো তাই হয়তো বা দেরি হচ্ছে। তাই সবুজ ভাইকে ফোন দিয়ে সুখবরটা জানালাম। কিন্তু সবুজ ভাই বল্লো যে সে বাসা থেকে এধরনের কোন খবরই পাই নাই। তবে তার কথায় আমি আর কর্নপাত করলাম না।
সোয় ১০টা বাজে। হাসান আমাকে প্রতিদিনকার মতো বল্ল -
-চলো একটু ঘুরে আসি।
-চলো।
দুজনেই বাইরে হাটছি। গোরস্থানের পাশদিয়ে। হাল্কা হাল্কা চাঁদের আলো আছে। মানুষ যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে কিন্তু চেহারা চেনা যাচ্ছে না। আমার আর হাসানের সখ ছিলো গোর স্থানের ভুত দেখা। তো ঐ দিন হাসান বল্লো
-চলো আজ ট্রাই করি??
-কি??
-ভুত...!!!
-চলো যাই......।
-চলো ভেতরে যাই। চলো।
আমারে দুজনের হাতে ছিলো চানাচুরেরন প্যাকেট।দুজনে গোরস্থানে ঢুকে পড়লাম। আর হাসানকে অন্য দিনের থেকে আলাদা আলাদা লাগছিলো।
যখন হাসছিলো তখন কেমন জানি রহস্য জনক ভাবে হাসছিলো।
এর ভেতরে সবুজ ভাই মেসে চলে এসেছে। সে মেসে ঢুকেই -
-মাফুজ.............মাফুজ.............।
-জ্বি ভাইয়া??
-আমাার ভাস্তে আসছে বলে???
-জ্বি।
-কোথায়???
-বাইরে রাহুল আর হাসান ভাই।
-ওহ্ আচ্ছা।
এর ভেতর আমি আর হাসান গোরস্থানের ভেতরে অনেক খানি চলে এসেছি। হাটছি , চানাচুর খাচিছ , আর কথা বলছি। হাসানÑ
-আজ কিছু একটা দেখাবোই তোমকে......
-কি আর দেখাবে??
-প্রতি দিন ই তো দেখাও......
-রিয়্যেলি আজ দেখাবো।
-ওকে বস।
দ্রুত হেটে চলেছে হাসান। যেন কিছু একটা খুজে বেড়াচ্ছে সে। যেন আস্তে আস্তে হাটলে সে সেটা হারিয়ে ফেলবে। একটু দুরে হাসান । আমি পেছনে। আস্তেই হাসান গোরস্থানের ভেতরের দিকে চলেছে সে। অথচ অন্য দিন ঐ দিকে সে যায় না।
এমন সময় চৌকিদারের ডাকÑ
-কে...??কে ......ঐ দিওক??
-মামা !! আমরা।
-আমারা কে???
-রাহুল আর হাসান।
-ওহ্ আচ্ছা।
মাঝে মাঝে যেতাম গোরস্থানের ভেতরে তাই তার সাথে আমাদের পরিচয় অনেক আগের থেকেই।
সেই বড় একটা লাইট। হাতে একটা বাসি । যেটা দিয়ে মাঝে মাঝে হুইসেল দিচ্ছে।কড়া কড়া গোঁফ। হাতে লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসলো চোকিদার মামা।
আমার হাতে সচানাচুর ছিলো যেটা আমার দু হাত দিয়ে পেছনে ধরে রেখেছি। ভাবছি মামাকে দেবো । তখনই মামা বল্লো-
-কিছু কি মিললো??? মামা???
-নাহ্ মামা। এ জীবনে আর বোধ হয় ভুত দেখা হবে না।
-দেখ কি হয়....!!!
এমন সময় আমার মোবাইলে কল বেজে উঠলো। দেখি সবুজ ভাইয়ের কল.......
-হ্যালো ভাই।
-হ্যা ,........কোথায়???
-গোরস্থানের ভেতরে।
-ওখানে কি??
-ভুত দেখছি..........।
-তাড়াতাড়ি মেসে আসো।
-থামেন হাসান আসুক আগে তারপর।
-হাসানকে কোথায় পেলে??
-ও তো বিকেলে মেসে এসেছে।
-তুমি কি জানো হাসান মারা গেছে????
-ধুরর কি যে বলেন।একটু আগেও আমার সাথে হাসান ছিলো। ও মরবে কোথা থেকে??
-ও আজ বিকেলে ওর ঘরে ঢুকে আর বের হয়নি। অবশেষে রাত্রি দশটার দিকে ওর ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওর লাশ বের করা হয়েছে। [ফোন আসার সাথে সাথে চোকিদার মামা বাসিতে হুইসেল দিতে দিতে চলে গেছেন।]
-তাহলে আমার সাথে এতক্ষণ কে ছিলো ????
-দ্রুত ওখান থেকে চলে এসো।যা হয়েছে হোক। হাসানদের বাসায় যেতে হবে।
আমি আর ওখান থেকে নড়তে পারছি না। মনে হচ্ছিলো আমার পা দুইটা পাথর হয়ে গেছে। চার পাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। পেছন থেকে হাতে খেয়াল করলাম আমার হাতে কিছু নেই। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই । আমার সাথে কি হয়েছে। পরের দিন বিকেলে হাসপাতালের বিছানায় নিজেকে আবিষ্কার করলাম।
পরে জানতে পেরেছি ঐ দিন গোরস্থানের ভেতর আমি ছাড়া আর কেউ ছিলো না। আর ঐ দিন গোরস্থানে কোন চোকিদার বা পাহারাদার কিছুই ছিলো না। আমার আসতে দেরি দেখে মেসের বড় ভাইয়েরা আমাকে গোরস্থানের ভেতর ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় অজ্ঞান উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তারপর তারা হাসানের বাসাতে যায়।ভোরে হাসানকে কবর দেয়া হয়। তারপর দুপুরেই সবাই কুষ্টিয়া চলে আসে আর আমার জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষা করে। আমার বাসাতে খবর দেয়ার পর আমার বাবাÑমা এসেছিলো। পরে ডাক্তার বলেছিলেন যে ক্ষতটা হয়েছিলো দৌড়ে পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে হয়েছিলো।
আশ্চর্য জনক ব্যাপার হলো আমাকে তারা উদ্ধার করে একটা নতুন কবরের পাশে থেকে। আর সেটি ছিলো একটি ছেলের কবর এবং সেটিও ছিলো আত্মহত্যা কেস।
পরে মাঝে মাঝেই স্বপ্নে হাসানকে দেখতাম। সেই হাসি হাসি মুখ।সেই চঞ্চল হাসান।
তবে আজও আমার অজানা ঐ দিনকার হাসান কে ছিলো। আর মেসের সবার কাছেও রহস্য হয়ে থেকে গেছিলো ঐ মিষ্টির ব্যাপারটা। ঐ দিন কি খেয়ে ছিলাম মিষ্টি নাকি অন্য কিছু??
পরে গোরস্থানের মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে সবকিছু বলে তাবিজ করে নিয়েছিলাম।
আর আশ্চর্য ব্যাপার হলো সবুজ ভাইয়ের জন্য রাখা হাসানের মিষ্টি একটি বিড়াল খেয়ে ফেলেছিলো যখন সবুজ ভাই আমাকে হাসানের মৃত্যুর সংবাদ দেন তখন।
হাসানের মৃত্যুর তিন চার দিন পর তার বাবা এসে তার সব কিছু নিয়ে যান।
প্রায় বছর খানেক হয়েছে হাসানের মৃত্যুর। আজও আমার মোবাইলে হাসানের ছবিটা দেখলে গা শিউরে ওঠে। মনে পড়ে ঐ দিনকার রাত্রের কথা। ঐ ঘটনা ঘটার মাস খানেকের ভেতরেই আমারা ঐ মেস ছেড়ে দিয়েছিলাম................

No comments:

Post a Comment